মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৩৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তঃ বিভাগ ও আন্তঃ অনুষদ মিনিবার ফুটবল প্রতিযোগিতার উদ্বোধন আজকের মেধাবী শিক্ষার্থীদের কেই ভবিষ্যত বাংলাদেশ বিনির্মানে কাজ করতে হবে। ডাঃ মাহবুবুর রহমান লিটন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সা. উপলক্ষে পুরস্কার বিতরন অনুষ্ঠিত ময়মনসিংহে প্রান্ত স্পেশালাইজড হসপিটালের ১১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ কর্মসূচির উদ্বোধন কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নাটক “মদিনার বিষাদ” ময়মনসিংহের নটরডেম কলেজে বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও শিক্ষা মেলা অনুষ্ঠিত ময়মনসিংহে মৃত নারীকে ধর্ষণ করেছে লাশ বহনকারী আবু সাঈদ ময়মনসিংহে পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট সারাদেশের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন,জন দুভোর্গ

ত্রিশালে উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ

রিপোর্টার নাম :
  • আপডেটের সময়: শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ১২৭ সময় দেখুন

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ঘুষের টাকা পরিশোধ না করলেই ঠিকাদারদের বিল আটকে দেন ত্রিশাল উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মদ শফিউল্লাহ খন্দকার।
অভিযোগ উঠেছে তার ঘুষকান্ডের কারণে বন্ধ ও ধীবগতিতে চলছে ৮ কোটি টাকা বরাদ্দের ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নির্মাণকাজ। ঢাকা (প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়) থেকে ফান্ড আনতেও ঠিকাদারদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়া ছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ।
জানা যায়, সাবেক এমপির সুপারিশে কিশোরগঞ্জের তাড়াইল থেকে বদলি হয়ে, গত বছরের (২০২৪ সালের) ২৮ ফেব্রুয়ারি ত্রিশালে যোগদান করেন প্রকৌশলী মুহাম্মদ শফিউল্লাহ খন্দকারকে। ওই এমপির কার্যকালে নিজেকে আওয়ামীলীগ পরিবারের একজন দাবি করে দাপটের সঙ্গে অনিয়ম দুর্নীতির চালিয়ে যেতে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে ও এসব দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)র ত্রিশাল অফিসে রয়েছেন ৩ জন উপ-সহকারী প্রকৌশলী। ৩ জন উপ-সহকারী প্রকৌশলী থাকা সত্বেও প্রকল্প কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে নিয়োজিত বাদশা মিয়া নামে এক উপ-সহকারী প্রকৌশলী। গেল ৩০ জুন বাদশা মিয়ার প্রকল্পের মেয়াদকাল শেষ হলেও তাকে দিয়েই করানো হচ্ছে উপজেলার স্কুল ও রাস্তাঘাটসহ ৬০ শতাংশ কাজ। রহস্যজনক কারন নয়, ঘুষ-দুর্নীতির বিশ্বস্ত ব্যক্তি হিসেবেই তার স্বাক্ষরে বিল উত্তোলনসহ এখনো সকল ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই অফিসের এক উপ-সহকারী প্রকৌশলী জানান, প্রকৌশলী মুহাম্মদ শফিউল্লাহর খন্দকারের সকল ঘুষ লেনদেনের কাজটি করেন তার একান্ত বিশ্বস্ত প্রকল্প কর্মকর্তা বাদশা মিয়া। তার কাছে গেলেই যেন মিলে সব সমস্যার সমাধান।
স্থানীয় ঠিকাদারদের অভিযোগ, দুর্নীতিবাজ এ কর্মকর্তাকে বরাদ্দের ২ শতাংশ কমিশন পরিশোধ না করলে কাজের বিল আটকে দেন। উপজেলা প্রকৌশলীর এমনই ঘুষকান্ডের কারণে বন্ধ রয়েছে উপজেলার দাসপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নওধার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ধলিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নির্মাণকাজ। ধীরগতিতে কাজ চলছে কাজিরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেওপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাঁঠাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ও গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নির্মাণকাজ। এছাড়া এক বছর আগে টেন্ডার হলেও গুজিয়াম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজ এখনো শুরুই হয়নি। ভ্যাট আইটি বাদে ৮ কোটি টাকা বরাদ্দের ওই ৮টি স্কুলের কাজ ঘুষকান্ড থেকে মুক্তি নিয়ে কবে শেষ হবে তা যেন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে আছে। এছাড়াও এই কর্মকর্তার যথাযথ তৎপরতা ও দায়িত্ব অবহেলার কারণে ২০২২ সালে শুরু হওয়া ৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীণ উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন ও হলরুম নির্মাণকাজের কোন অগ্রগতি নেই বলেও অভিযোগ আছে।
ঘুষের এক লাখ পেয়েও উপজেলা প্রকৌশলী খুশি নন বলে, বছরখানেক আগে টেন্ডার হওয়া গুজিয়াম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের কাজ ঠিকাদারকে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঢাকা (প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়) থেকে ফান্ড আনার জন্যও ঠিকাদারের কাছ থেকেও নেয়া হয় টাকা।
সরেজমিন পৌরশহরের নওধার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, পুরাতন ভবনে শিক্ষকদের বসার জন্য একটি কক্ষ ও দুটি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। বছর খানেক ধরে নির্মানাধীণ ভবনের কাজ বন্ধ থাকায় শ্রেণিকক্ষের সংকটের ফলে ব্যাহত হচ্ছে ক্লাস-পরীক্ষা।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সিদ্দিক মিয়া জানান, কাজ শেষ না হওয়ায়, খোলামেলা পড়ে থাকে। এতে রাতের বেলায় মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিনিত হয়েছে বিদ্যালয়টি। শ্রেণিকক্ষের পাশাপাশি ওয়াশরুমের প্রয়োজনীয়তা খুবই জরুরী। তাই দ্রুত কাজ শেষ করতে বহুবার ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাতে কোন লাভ না হওয়ায়, ৭/৮মাস আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকৌশলী বরাবর লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার মেলেনি। তবে ঠিকাদার সাজ্জাদুল ইসলাম বাবু জানিয়েছেন তিনি খুব দ্রুতই কাজ শুরু করবেন।
দাসপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণাধীন ভবনের গ্রেডভিম ও তার ওপর কলামের (পিলারের) রড বাধাঁর কাজ পর্যন্ত সম্পন্ন হলেও ৪ মাস ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে বলে জানান বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার খাইরুল ইসলাম বলেন, ভ্যাট আইটি সহ এক কোটি ২৮ টাকা। ৪০ লাখ টাকার কাজ করেছি। তারমধ্যে বিল পাইছি ২১ লাখ টাকা। ঘুষের টাকা দেইনি বলে, উপজেলা প্রকৌশলী বিল অনুমোদন করছে না। তিনি প্রতিটি কাজে বরাদ্দের টু পারসেন্ট কমিশনের টাকা না পাওয়া পর্যন্ত হয়রানি চালিয়ে যান। আমার মতো অবস্থা অনেকেরই। ঘুষ দিচ্ছে না, বিল পাচ্ছে না।
ঠিকাদার তাজুল ইসলাম জানান, গুজিয়াম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণে টেন্ডারের মাধ্যমে দরপত্র আহবান করা হয়। কাজটি পাই আমি। ঢাকা থেকে ফান্ড অনুমোদন ও কমিশন বাবদ উপজেলা প্রকৌশলী আমার কাছ থেকে নেন এক লাখ টাকা। এরইমধ্যে এক বছর অতিবাহিত হলেও আমাকে কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছেন না তিনি। এছাড়াও উপজেলার কৈতরবাড়ী সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের কাজ শেষ করেছি এক বছর আগে, অথচ এখনো ফাইনাল বিল পাইনি। উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারকে ঘুষ না দিলেই আটকে যায় বিল।
ভবন নির্মাণকাজের কোন অগ্রগতি নেই কেন, জানতে চাইলে কাজিরকান্দা এবং দেওপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঠিকাদার জিয়া উদ্দিন শাহীন বলেন, সমস্যার কারণে এক বছর কাজ বন্ধ ছিল। ২ পার্সেন্ট ঘুষের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি জানান, আমার সঙ্গে পার্সেন্টিসের ঝামেলা শেষ। কাজ শুরু করেছি।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার জানান, উনি ত্রিশালে যোগদানের পর এ যাবত কোন ঠিকাদার বরাদ্দের দুই পারসেন্ট টাকা পরিশোধ করা ছাড়া কোন কাজের বিল সঠিকভাবে পাননি।
ঘুষের টাকা পরিশোধ না করলে ঠিকাদারদের বিল আটকে দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে, এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ত্রিশাল উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মদ শফিউল্লাহ খন্দকার বলেন, কোন ঠিকাদারের কাছ থেকে কোনো ঘুষ নেইনি। ফান্ড নেই তাই বিল দিতে পাচ্ছি না। ফান্ড এলেই ধারাবাহিক ভাবেই বিদ্যালয়গুলোর চলবে। ফান্ড আনার নামে ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টিও অস্বীকার করে তিনি বলেন, এসব ভুয়া আলাপ।
৩ জন উপ-সহকারী প্রকৌশলী থাকা সত্বেও মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্প কর্মকর্তা এক বাদশা মিয়াকে দিয়েই কিভাবে উপজেলার স্কুল ও রাস্তাঘাটসহ ৬০ শতাংশ কাজ করাচ্ছেন ? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাদশার দায়িত্ব শেষ হয়নি, আর কম বেশি সবাইকে দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে।

অনুগ্রহ করে এই পোস্টটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন।

এই বিভাগের আরও খবর
© All rights reserved © 2025 প্রতিদিন সংবাদ
ESAITBD Sof-Lab UAE/BD